
রিয়ার বয়স মাত্র চার। মুখে আধো আধো কথা, চুলে পাকা রঙের ক্লিপ, আর চোখে সারাক্ষণ কৌতূহল। রিয়া খেতে চায় না, ঘুমাতে চায় না, কথা কম বলে। কিন্তু, একটা জিনিস ছাড়া ওর কিছুই চলে না — ‘মায়ের মোবাইল’।
রিয়ার মা রুমা একজন গৃহিণী। সকালে রান্নাবান্না, দুপুরে কাপড় ধোয়া, বিকেলে বাজার — ব্যস্ততা যেন থামেই না। এর মাঝে রিয়াকে সময় দেওয়া বড় কষ্টকর হয়ে পড়ে তার জন্য।
একদিন সকালে রুমা দেখল রিয়া খেতে চায় না। কাঁদছে, মাথা নিচু করে রেখেছে।
— “কি হলো রিয়া? খাচ্ছ না কেন?”
— “ফোন দাও, কার্টুন দাও!”
রুমা বিরক্ত হয়ে নিজের মোবাইলটা ধরিয়ে দিলো, ইউটিউব চালু করে। রিয়া মুখে ভাত নিতে নিতে চোখ রেখেছে সেই রঙিন পর্দায়।
এভাবেই চলতে লাগল। রুমা রান্না করে, রিয়া ফোন দেখে। রুমা কাপড় শুকায়, রিয়া ফোন দেখে। একদিন রুমা তার ভাবি রুকুকে অনুরোধ করলেন:
— “ভাবি, আমি একটু মার্কেটে যাবো। রিয়াকে একটু সামলাবেন?”
— “নিশ্চয়ই! ও তো অনেক ভালো মেয়ে।”
— “ফোনটা দিয়ে গেলাম, কার্টুন চলবে, সমস্যা হবে না।”
ভাবি অবাক। শিশুরা খেলাধুলা করবে, দৌড়াবে, গল্প করবে — সেই বয়সে রিয়া এক কোণায় বসে স্ক্রিনে চেয়ে আছে নিস্তব্ধভাবে।
দিন যায়, মাস যায়। রিয়ার মুখে হাসি নেই। ও কারো সঙ্গে কথা বলে না, খেলার মাঠে যেতে চায় না, ঘুম আসতে দেরি হয়।
একদিন স্কুল থেকে নোট আসে —
“রিয়া ক্লাসে মনোযোগ দেয় না। সে একা বসে থাকে, কারও সঙ্গে মেশে না। চিন্তার বিষয়।”
রুমা চমকে উঠলেন। সে কি বুঝেছিল, নিজের ব্যস্ততা ঢাকতে মোবাইল দিয়ে মেয়ের বিকাশের পথ বন্ধ করে দিচ্ছেন?
সেদিন রাতে রুমা চুপচাপ রিয়ার পাশে বসলেন। ফোনটা তুলে নিলেন।
— “আজ থেকে আমরা গল্পের খেলা খেলবো। তুমি একটা গল্প বলো।”
— “আমার তো গল্প জানা নেই মা!”
— “তাহলে আমি বলি, তুমি শোনো…”
সেই রাত থেকে নতুন এক গল্প শুরু হলো — মা আর মেয়ের একসাথে সময় কাটানোর গল্প।
রিয়া ধীরে ধীরে কথা বলা শুরু করল, রংতুলিতে আঁকা শিখল, আর প্রতিদিন ফোন ছাড়াই খেতে শিখল।
📌 গল্পের বার্তা:
মোবাইল শিশুর হাতে দিলে চুপচাপ থাকে ঠিকই, কিন্তু তারা কথা বলা, ভাব প্রকাশ, এবং মনোযোগের শক্তি হারাতে থাকে। সময় দিন, গল্প বলুন, ভালোবাসুন — কারণ আপনার একটা মুহূর্তই ওর জীবনের ভিত্তি হয়ে উঠতে পারে।