
নাবিল ছিল ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। ভদ্র, চুপচাপ, কিন্তু লেখাপড়ার প্রতি একেবারেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল। ঘুম থেকে উঠে স্কুলে যাওয়া, এসে মোবাইল নিয়ে বসে যাওয়া, ইউটিউব আর গেম—এই ছিল তার প্রতিদিনের রুটিন। বইয়ের পাতায় চোখ রাখত মাত্র কয়েক মিনিট, তারপর বিরক্ত হয়ে উঠে যেত।
তার বাবা-মা শুরুতে ভেবেছিলেন এটা বয়সজনিত সাময়িক অবস্থা। কিন্তু দিন যত গড়াত, সমস্যা তত গভীর হতে লাগল। পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হতে লাগল, স্মরণশক্তি কমে যাচ্ছিল, চোখ লাল হয়ে থাকত, রাত জাগা অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল।
নাবিলের মা বলতেন, “আমার ছেলেটা যেন দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে, আমি শুধু অসহায়ভাবে দেখছিলাম।”
তখন তারা সিদ্ধান্ত নিলেন—আর নয়! পরিবর্তন আনতেই হবে।
🔄 পরিবর্তনের যাত্রা শুরু
- স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ:
একেবারে মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়নি, বরং নাবিলের সঙ্গে কথা বলে দিন-প্রতিদিন সময় সীমিত করা হয়। শুরুতে ২ ঘণ্টা, পরে ১ ঘণ্টা, এরপর সপ্তাহে নির্দিষ্ট সময়। - সংযোগ স্থাপন:
বাবা অফিস থেকে ফিরে ক্লান্ত হলেও প্রতিদিন কিছুটা সময় শুধু নাবিলের জন্য রাখতেন। মা একসাথে গল্প পড়তেন, রান্না শিখাতেন, কখনো হাতে ধরে ছবি আঁকাতেন। - নতুন অভ্যাস গড়ে তোলা:
সকালে হাঁটতে যাওয়া, বিকেলে পাজল গেম, প্রতি শুক্রবার ‘স্ক্রিন-মুক্ত পারিবারিক রাত’ চালু হলো—গল্প বলা, গান গাওয়া, একসাথে রান্না। - পুরস্কার ও প্রশংসা:
যেদিন নাবিল বই পড়ায় মনোযোগ দিত, হোমওয়ার্ক নিজে শেষ করত—তাকে ছোট্ট উপহার, বাহবা বা বাড়তি খেলাধুলার সময় দেওয়া হতো। - আদর্শ দেখানো:
মা-বাবা নিজেরাও মোবাইল কম ব্যবহার করতে শুরু করেন। খাবার টেবিলে মোবাইল রাখা একেবারেই বন্ধ।
🌱 ফলাফল?
ধৈর্য আর ভালোবাসার সে যাত্রা অবশেষে ফল দিতে শুরু করল।
নাবিল এখন সকালে নিজে থেকে উঠে বই পড়ে, সময়মতো পড়া শেষ করে, টিভি বা মোবাইল একাই বন্ধ করে দেয় নির্ধারিত সময় শেষে। পরীক্ষায় তার রেজাল্ট আগের চেয়ে অনেক ভালো, আর সবচেয়ে বড় কথা—সে এখন হাসিখুশি, আত্মবিশ্বাসী।
তার মা বলেন,
“আমার সন্তানকে আমি আবার ফিরে পেয়েছি। শুধু সময়, ভালোবাসা আর ধৈর্য দিয়েই সম্ভব হয়েছে।”
❤️ এই গল্প শুধু নাবিলের নয়, প্রতিটি সন্তানের…
প্রযুক্তি দরকার, কিন্তু নিয়ন্ত্রণের সাথে।
শিশুদের হারাতে না দিয়ে, সময় দিন, কথা বলুন, সংযোগ তৈরি করুন।
তাদের ফেরানো যায়—ভালোবাসা দিয়ে, বোঝানোর মাধ্যমে—not by রাগ বা বকাবকি।